আরবি ভাষায় নুকতা ও যবর-যের কখন যুক্ত হয়?

ইতিহাসের কুখ্যাত শাসক হাজ্জাজ বিন ইউসুফকে অনেকেই এই কৃতিত্ব দেন যে, তিনিই আরবি ভাষায় নুকতা ও যবর-যের-পেশ যুক্ত করেন। আসলে এই ইতিহাসটা সত্য নয়। উলটো কিছু প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কার তো এ কথাই প্রমাণ করে—আল্লাহর রসুল (স)-এর আগমনের আগেও আরবি ভাষায় নুকতা ও যবর-যের ছিল।

হযরত ইবনে আব্বাস (রা) বলেন, সর্বপ্রথম বাওলানের (তাঈ গোত্রের শাখা) তিনজন লোক আরবি বর্ণসমূহ উদ্ভাবন করেন। তারা হলেন : মুরামির ইবন মুররাহ, আসলাম ইবন সুদরাহ ও আমির ইবন জুদরাহ। তারা আম্বার নগরীতে এসে মিলিত হন এবং এখানেই তারা (সিরীয় বর্ণমালার মডেল অনুকরণ করে) যৌথভাবে বিচ্ছিন্ন ও যৌগিক দ্বিবিধ অবস্থায় আরবি বর্ণগুলো উদ্ভাবন করেন। মুরামির বর্ণগুলোর আকৃতি তৈরি করেন, আসলাম বর্ণগুলোর বিচ্ছিন্ন ও যৌগিক রূপ নির্ণয় করেন এবং আমির নুকতা আবিষ্কার করেন। (আল ফিহরিস্ত, ইবনুন নাদিম, পৃষ্ঠা ৪-৫)

এখান থেকে বোঝা যায় একদম প্রথম জমানা থেকেই আরবি বর্ণমালায় নুকতা ছিল, আর এটাই অধিকতর যুক্তিযুক্ত। কারণ এটা অসম্ভব যে, সম-আকৃতির বর্ণগুলো কোরআনে নুকতা প্রয়োগের সময় পর্যন্ত নুকতাবিহীনভাবেই চালু ছিল।

এই বক্তব্যের আরেকটি প্রমাণ হলো এই আছার :
إِنَّ الصَّحَابَةَ جَرَّدُوا الْمُصْحَفَ مِنْ كُلِّ شَيْءٍ حَتَّى مِنَ النُّقَطِ والشكل
সাহাবিগণ কোরআনকে প্রত্যেক কিছু থেকে, এমনকি নুকতা ও স্বরচিহ্ন প্রয়োগ থেকেও মুক্ত রেখেছেন।

উপর্যুক্ত বর্ণনা থেকে বোঝা যায়, সাহাবিগণের নুকতার জ্ঞান ছিল। তবে তারা মুসহাফে উসমানিতে বর্ণিত কোরআনের বর্ণগুলোর উপর অতিরিক্ত কিছু বাড়ানোকে অশোভনীয় মনে করতেন। যদি তাদের যুগে নুকতার অস্তিত্ব না-ই থাকত, তাহলে তা থেকে কোরআনকে মুক্ত রাখার প্রশ্নই উঠত না।

সাম্প্রতিককালে বিশিষ্ট গবেষক Morilz ও Abbott প্রমাণ করতে চেষ্টা করেছেন যে, ইসলাম পূর্বকাল থেকেই নুকতা ও যবর-যেরের প্রচলন ছিল। মিসরের গভর্নর হজরত আমর ইবনুল আস (রা)-এর জনৈক কর্মকর্তা বারদিয়ার উদ্দেশ্যে লিখিত একটি পত্রে কয়েকটি নুকতাবিশিষ্ট বর্ণের হদিস পাওয়া যায়।

কয়েক বৎসর আগে তায়িফ শহরের একটি জলাধারে হিজরি ৫৮ সালে হযরত মুআবিয়া কর্তৃক নির্মিত যে উৎকীর্ণ লিপি আবিষ্কৃত হয়েছে এবং যাকে প্রখ্যাত পুরাতত্ত্ববিদ G. C. Miles আমেরিকায় প্রকাশ করেছেন, তাতে একাধিক বর্ণে বিন্দুর ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়। এ দুটি লিপি থেকেও বোঝা যায়, আরবি লিপিতে নুকতার ব্যবহার তাদের সময়ে তো ছিলই; বরং এর অনেক পূর্ব থেকেই তা প্রচলিত ছিল। কেননা এটা যুক্তিসম্মত নয় যে, এ লিপি দুটিতেই সর্বপ্রথম নুকতা ব্যবহার করা হয়েছে। তবে এটা স্বতঃসিদ্ধ যে, ইসলামের প্রাথমিককালে পবিত্র কোরআন লেখার ক্ষেত্রে নুকতা ব্যবহার করা হয়নি।

এই হিসাবে বলা যায় হাজ্জাজ বিন ইউসুফ কোরআনে নুকতা ও যবর-যের যোগ করেন, কিন্তু এর প্রচলন আগে থেকেই আরবিতে ছিল।


Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *