Your cart is currently empty!
খ্রিষ্টান রাজা যখন মুসলমানদের ক্যালিগ্রাফির প্রেমে পাগল হয়ে যায়!
হিজরি প্রথম শতকে পৃথিবীর তিন উপমহাদেশেই যখন ইসলাম ছড়িয়ে পড়ে, দলে দলে অমুসলিমরা ইসলাম গ্রহণ করতে থাকে। মুসলমানদের সৌন্দর্যবোধ তাদের আকৃষ্ট করতে থাকে, আস্তে আস্তে তারা নিজেদের বর্ণমালা ছেড়ে দিয়ে আরবিতে লিখতে শুরু করে। ইরানিরা ছিল নিজেদের সংস্কৃতি নিয়ে খুব গর্বিত এক জাতি, তবু তারা পারসি বর্ণমালা ছেড়ে দিয়ে আরবি হরফকে আপন করে নেয়, এবং ক্যালিগ্রাফিচর্চাকে একধাপ এগিয়ে নিতে তাদের ভূমিকাও কম নয়।
মরক্কো থেকে শুরু করে চীনের পূর্ব তুর্কিস্তান পর্যন্ত প্রতিটি জাতিই আরবিকে তাদের বর্ণমালা বানিয়ে নেয়, এমনকি বাংলাও এক সময় আরবি বর্ণমালায় লেখার প্রচলন ছিল। কীভাবে কবে থেকে এই আত্তীকরণ শুরু হয়, ইতিহাসে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই। কোনো মুসলিম শাসক বা প্রশাসকও মানুষকে আরবি বর্ণমালা গ্রহণ করতে চাপ দেয়নি, তারা ভালোবেসে নিজ থেকেই এই বর্ণমালা গ্রহণ করেছিল। (অথচ ফরাসিরা আফ্রিকায়, ডাচরা ইন্দোনেশিয়ায়, কামাল আতাতুর্ক তুরস্কে লাতিন হরফ গ্রহণ করতে কী পরিমাণ যে অত্যাচার করেছিল, ভাবতেও গা শিউরে উঠে।)
ইউরোপে তখন শিল্পচর্চার জোয়ার উঠেছিল। তারা যখন মুসলমানদের ক্যালিগ্রাফি ও অ্যারাবেস্ক দেখে, একদম পাগল হয়ে যায়। এমন সুন্দর জিনিস আগে কখনোই দেখেনি। মার্সিয়ার (বর্তমান যুক্তরাজ্যের একটি রাজ্য) রাজা ওফা তো সিদ্ধান্তই নিয়ে নেন, মুসলমানদের স্বর্ণমুদ্রায় ব্যবহৃত ক্যালিগ্রাফির মতো ক্যালিগ্রাফি তাদের স্বর্ণমুদ্রাতেও যোগ করবেন। কিন্তু তাদের ভাষা তো ইংরেজি, আর ক্যালিগ্রাফির ভাষা আরবি। দুই ভাষার বর্ণমালায় তো মিল নেই। তাহলে কী করা যায়? তিনি নির্দেশ করলেন আরবি ক্যালিগ্রাফির মতো কিছু একটা এঁকে দিতে, এর কোনো অর্থ থাকার দরকার নেই, দেখতে সুন্দর হলেই চলবে! কারিগররা তাকে একটি স্বর্ণমুদ্রা এনে দেখালেন, মাঝখানে তার নাম ‘ওফা রেক্স’ লেখা। ৭৭৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি এই মুদ্রা চালু করেন।
এই যে আরবির ঢংয়ে কিছু একটা লেখা, পরবর্তীতে ইতিহাসবিদগণ এর নাম দিয়েছেন pseudo-Arabic (সিউডো-অ্যারাবিক)। মজার ব্যাপার হলো, রাজা ওফার সেই স্বর্ণমুদ্রায় আরবির মতো করে একটা নকশা আঁকার চেষ্টা করলেও তা আরবিই হয়ে যায়। ঐতিহাসিকগণ এখন অবাক হয়ে দেখেন—এক খ্রিষ্টান রাজার খ্রিষ্টধর্মালম্বীদের দেশে প্রচলিত স্বর্ণমুদ্রার গায়ে লেখা ‘মুহাম্মাদ রসুলুল্লাহ’!
Leave a Reply