Your cart is currently empty!
আমাদের অন্দরমহলে কেন জায়গা পায়নি ইসলামি সংস্কৃতি?
বাংলদেশে মুসলমানরা যে শিল্প-সংস্কৃতির চর্চা করে, তাতে খুব কমই ইসলামের ছায়া পাওয়া যায়, কিন্তু কেন? কারও কারও বাসায় অবশ্য কাবাঘর, মদিনার সবুজ গম্ভুজ কিংবা কোরআন পাঠরত দুই শিশুর ছবি দেখা যায়, কিন্তু তাতে শিল্পত্বের ছোঁয়া নাই। শিল্প হিসেবে কেন ইসলামি সংস্কৃতি আমাদের মাঝে স্থান পায়নি, আমি চেষ্টা করেছি তার রহস্য উদ্ঘাটন করতে। অবশ্যই কেউ চাইলে দ্বিমত পোষণ করতে পারে।
দেখুন, ইসলাম গ্রহণ করতে গিয়ে পারস্যবাসী তাদের ভাষা ও সংস্কৃতি বিসর্জন দেয়নি। এ কারণে দেখবেন আরবি সলাত-সিয়াম পারস্যে এসে নামাজ-রোজা হয়ে যায়, কিন্তু পরিবর্তন কেবল শব্দেই, এবাদত ঠিকই এবাদত থাকে। তারা হাজার বছরের সমৃদ্ধ ভাষা ও সংস্কৃতিকে ইসলামের সাথে এমনভাবে মিলিয়ে নেয়, আপনি চাইলেও এখন পারস্য থেকে ইসলামকে আলাদা করতে পারবেন না। পাহলবি রাজবংশ এ কারণেই অর্ধশতকের বেশি ক্ষমতার ঘানি টানতে পারেনি, তারা চেয়েছিল ইরানে পশ্চিমা সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করতে।
পারস্যবাসী ইসলাম থেকে তার সৌন্দর্যটুকু নিয়েছে, তার সাথে নিজেদের সৌন্দর্য মিশিয়ে নতুন এক ধারা তৈরি করেছে। কিন্তু আমরা বাঙালিরা তা করিনি। আমাদের মধ্যে যারা প্রথমদিকে ইসলাম গ্রহণ করেছেন, তারা চেষ্টা করেছেন পুরোপুরি বাঙালিত্বকে ত্যাগ করতে। এই জন্যই শাহ মুহম্মদ সগীর রাগে-দুঃখে লিখেছিলেন :
যে সবে বঙ্গেত জন্মি হিংসে বঙ্গবাণী।
সে সব কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি॥
দেশী ভাষা বিদ্যা যার মনে ন জুয়ায়।
নিজ দেশ তেয়াগী কেন বিদেশ ন যায়॥
শাহ মুহাম্মদ সগীরের এই কবিতা ছিল প্রথম দলের উপর জোরালো আঘাত। এরপর যে দ্বিতীয় দলের আবির্ভাব হয়, তারা সবকিছুতে বাঙালিয়ানা ভাব আনতে গিয়ে নিজেদেরকে হিন্দুদের সাথে মিলিয়ে ফেলে। কেউ মাঝামাঝি থাকতে পারেনি, যেকোনো একদিকে হেলে পড়েছেই। এরপর, যদি ফরায়েজি আন্দোলনের ইতিহাস দেখি, বুঝতে পারি সেই আন্দোলন ছিল মুসলমানদের থেকে হিন্দুয়ানী রীতিনীতি দূর করার আন্দোলন। এই আন্দোলন যখন কঠোর থেকে কঠোর হতে শুরু করে, তখন আবার একদল সম্প্রীতির আলাপের বাহানায় মুসলমানদের মধ্যে হিন্দুত্বের অনুপ্রবেশ ঘটায়। মোটাদাগে এ-ই আমাদের ইতিহাস : হয় আমরা মুসলমান হতে গিয়ে বাঙালিত্ব ত্যাগ করেছি, নাহয় বাঙালি হতে গিয়ে হিন্দুত্বকে গ্রহণ করে নিয়েছি। একই সাথে বাঙালি মুসলমান হতে পারিনি।
ঠিক এই কারণেই চীনদেশে ইসলাম গিয়ে চৈনিক-আরব লিপিশৈলীর জন্ম দিতে পেরেছে, কিন্তু বাংলাদেশে আরবি লিপি স্থান পায়নি। আমাদের ঘরে আরবি ক্যালিগ্রাফির উপস্থিতি দেখা যায় না বললেই চলে, কিন্তু ঠিকই হিন্দুয়ানী সংস্কৃতির ইঙ্গিতবাহী কোনো শিল্পের উপস্থিতি দেখা যায়। আমাদের এই চক্কর থেকে বের হওয়া উচিত। আমাদের মাঝে ভারসাম্যবোধের চর্চা জরুরি। একই সাথে বাঙালি ও মুসলিম হওয়ার প্র্যাকটিসই হতে পারে এর সমাধান।
Leave a Reply