ইতিহাসের প্রথম আরবি ক্যালিগ্রাফার

ক্যালিগ্রাফি শব্দটি যদিও এখন নির্দিষ্ট ধরনের শিল্প বোঝাতে ব্যবহৃত হয়, কিন্তু এর মূল অর্থ সুন্দর লেখা। মানুষ প্রথমে লিখতে শিখেছে, এরপর সুন্দরভাবে লিখতে শুরু করেছে, তৃতীয় ধাপে এসে সুন্দর লেখা আলাদা শিল্পের মর্যাদা পেয়েছে। দ্বিতীয় ধাপ থেকে তৃতীয় ধাপে উন্নীত হতে যারা কাজ করেছেন, এর মধ্যে একজনের ব্যাপারে যদি বলি—‘তিনিই ইতিহাসের প্রথম ক্যালিগ্রাফার’, তাহলে ভুল হবে না। কে সেই মহামনীষী? তিনি ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলী (রা)।
খোলাফায়ে রাশেদিনের যুগে, যখন সবে কোরআনকে মলাটবদ্ধ বই আকারে অনুলিপি করা শুরু হয়েছে, হযরত আলী (রা) তখন লিপিকারদের কীভাবে লিখতে হবে তার দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন।

তাকে মনে করা হয় সমস্ত প্রধান ক্যালিগ্রাফারের আধ্যাত্মিক শিক্ষক। তিনিই প্রথম লিপিকে শিল্প মানে উন্নীত করেন। তিনি কলম নিয়ে অনেক ভাবেন—কীভাবে কলম তৈরি করা হলে হাতের লেখা সুন্দর হবে। অবশেষে তিনি সেই কৌশল আবিষ্কার করতে সক্ষম হন। তিনি বলেন, ‘তোমরা কলমের জিলফা প্রসারিত করো এবং মোটা থেকে তির্যকভাবে মাথার দিকে ক্রমে চিকন করে কেটে যাও, যাতে সঠিক সমানুপাত ও খাড়া আলিফ হয়।’
বর্তমানে ক্যালিগ্রাফি শিল্পীরা যে বাঁশের কলম ব্যবহার করে, তা এই নিয়মেই করে।

হযরত আলী (রা) ক্যালিগ্রাফি চর্চাকে নিছক শখ নয়, বরং ‘পেশা’ বানাতে উৎসাহিত করেন। তিনি আর বলেন,

عَلَيْكُمْ بِحُسْنِ الْخَطَ فَإِنَّهُ مِنْ مَفَاتِيحَ الرِّزْقِ

‘তোমরা হাতের লেখাকে সুন্দর করো। কেননা সেটা তোমাদের রিজিকের উপায় হবে।’

তার এই কথার প্রেক্ষিতে বহুমানুষ ক্যালিগ্রাফার হওয়ার অনুপ্রেরণা পায়। তারা শিল্পচর্চাকে জীবিকা বানিয়ে নেয়। যার ধারাবাহিকতা আজও আছে। যদিও আমাদের দেশে ক্যালিগ্রাফি শিল্পীকে যথেষ্ট মূল্যায়ন করা হয় না।
হযরত আলী (রা)-এর শাসনামলে ইরাকের কুফায় চারুশিল্প ও ললিতকলার প্রসার ঘটতে শুরু করে। এছাড়াও তখন ইরাক, পারস্য, সিরিয়া ও মিসর এবং আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে মুসলিম ও অমুসলিম নির্বিশেষে সকলের মধ্যে আরবি ভাষার পাশাপাশি আরবি লিপিও চর্চা করতে শুরু করে।


Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *