ঘরবাড়ি সুন্দর করে সাজানো কি অহংকারের প্রকাশ?

ইসলাম আমাদের দুনিয়ালোভী হতে নিষেধ করে, কিন্তু আল্লাহ তাআলা যে নেয়ামত আমাদের দিয়েছেন, তা প্রকাশ করতে নিষেধ করে না। বরং এরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তার বান্দার জীবনে নেয়ামতের প্রকাশ দেখতে চান।’ (জামে তিরমিজি, হাদিস নং ২৮১৯)

আল্লাহর রসুল (স) পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও সাজ-সজ্জার উপর খুবই গুরুত্ব দিতেন। তিনি সব সময় পরিপাটি পোশাক পরতেন, সুগন্ধি ব্যবহার করতেন, চিরুনি দিয়ে সুন্দর করে চুল আঁচড়াতেন, এবং প্রতিবার নামাজের আগে মুখ পরিষ্কার করতেন। তার চারপাশ জুড়ে এক শুভ্র উজ্জ্বলতা বিরাজ করত। লোকজন তাকে দেখে বলত, ‘আল্লাহর কসম, এত সুন্দর মানুষ আগে কখনও দেখিনি।’

অনেকেই মনে করে সৌন্দর্য প্রকাশ করা এক ধরনের অহংকার। এটা নিতান্তই ভুল ধারণা। আল্লাহর রসুল (স)-এর আমলেও কোনো কোনো লোকের মনে এই ধারণা জন্মেছিল। আল্লাহর রসুল (স) তাদের এই ধারণা দূর করে দেন। একবার তিনি বলেন, ‘যার অন্তরে বিন্দু পরিমাণ অহংকার থাকবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।’ তখন এক সাহাবি বললেন, ‘কিন্তু মানুষ তো চায় তার পোশাক সুন্দর হোক, তার জুতা সুন্দর হোক।’ (অর্থাৎ সৌন্দর্য প্রকাশ করা তো মানুষের স্বভাবজাত চাহিদা, এটাও কি অহংকার হবে?) আল্লাহর রসুল (স) বললেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ সুন্দর, এবং তিনি সৌন্দর্যকে ভালোবাসেন। (অর্থাৎ সুন্দর পোশাক ও সুন্দর জুতা ব্যবহার করা অহংকার নয়, বরং) অহংকার হলো সত্য প্রত্যাখ্যান করা এবং মানুষকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা।’ (মুসলিম শরিফ, হাদিস নং ৯১)

এ হাদিস থেকে বুঝতে পারি—সৌন্দর্যের প্রকাশ অহংকার নয়, বরং মানুষের স্বভাবজাত চাহিদা। মানুষ সব সময় চায় তার বাড়িঘর দেখতে সুন্দর হোক, তার রুমের ডেকোরেশন দেখে মেহমানের নয়ন জুড়িয়ে যাক। এমনটি চাওয়ায় কোনো পাপ নাই। হ্যাঁ, যদি বড়ত্ব জাহির করা উদ্দেশ্য হয়, তখন তা অহংকার হয়ে যাবে। তবে অহংকার না করেও নির্দ্বিধায় সৌন্দর্যচর্চা সম্ভব।

আজকাল অনেকেই তাদের বৈঠকখানা ও শোবার ঘরে ক্যালিগ্রাফি লাগায়। শুধু অন্যের দেখার জন্য নয়, নিজের কাছেও সুন্দর ও শৈল্পিক পরিবেশ ভালো লাগে। মানবজীবনে এই ভালো লাগার প্রয়োজন আছে, এর ফলে আমরা আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করতে পারি।


Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *