Your cart is currently empty!
আরবি হরফের প্রাচীন রূপ
আরবি হরফ কী প্রাচীনকালেও এমনই ছিল?
অবশ্যই না। সবকিছুই পরিবর্তন-বিবর্তনের মধ্য দিয়ে এগোয়। ইসলামের আগে কিংবা প্রথম হিজরি শতকেও আরবি লেখার ধরন এমন ছিল না। কীভাবে আরবি হরফ বর্তমান রূপ পেল, আজ আপনাদের সেই গল্পই বলব।
লিপিবিজ্ঞানীদের মতে আরবি হরফ এসেছে মিশরীয় হায়ারোগ্লিফস থেকে। আপনারা নিশ্চয় পিরামিডের গায়ে উৎকীর্ণ হায়ারোগ্লিফস বর্ণমালার ছবি দেখেছেন, মিশরীয়রা বিভিন্ন প্রাণী বা বস্তুর ছবি এঁকে মনের ভাব প্রকাশ করত। যেমন হায়ারোগ্লিফসের প্রথম হরফ ‘আলিফ’, যার অর্থ ষাঁড়। দ্বিতীয় হরফ ‘বা’, যার অর্থ ঘর। এখন কাউকে যদি বোঝাতে হয় অমুকের কাছে একটি ঘর ও ষাঁড় আছে, তাহলে একটি আলিফ ও বা লেখা হতো। এই ধরনের হরফকে ইংরেজিতে Picto-graphy, বাংলায় ‘চিত্রলিপি’ বলা হয়। লেখাটা বেশ কঠিন ছিল, প্রত্যেক লেখককে তখন আর্টিস্ট হতে হতো।
কিন্তু সিনাই নদীর পারের লোকজন অতো ঝামেলায় যেতে রাজি ছিল না। তারা ‘আলিফ’ বোঝাতে আস্ত ষাঁড় না এঁকে শুধু শিংওয়ালা মাথা, আর ‘বা’ বোঝাতে কেবল ঘরের সামনের অংশ আঁকত। এভাবে তারা লেখালেখির জন্য ২২টি হরফ নির্দিষ্ট করে।
সিনাই নদী থেকে উত্তরে, বর্তমানে যেখানে লেবানন ও দখলকৃত ফিলিস্তিন, সেখানে আজ থেকে সাড়ে চার হাজার আগে ফিনিশীয়রা বসবাস করত। তারা ছিল ব্যবসায়ী জাতি। তো তারা ব্যবসায়িক প্রয়োজনেই সিনাই নদীর পারের লোকজন থেকে ২২টি হরফ গ্রহণ করে, তারপর একটু ঘষামাজা করে স্বতন্ত্র রূপ দেয়। তারা যার সাথেই লেনদেন করত, চুক্তিনামা ও হিসাব লিখে রাখত। এভাবে তাদের সাথে ব্যবসা করতে গিয়ে সিরিয়া ও আরব দেশের লোকেরাও আস্তে আস্তে এই হরফে লিখতে শুরু করে। এরপর সময়ের পরিবর্তনে ফিনিশীয় বর্ণমালার অনেকগুলো ভ্যারিয়েশন তৈরি হয়। হিব্রু, গ্রিক ও আরামাইক—এই তিন ভাষার বর্ণমালা এই ফিনিশীয় বর্ণমালারই পরিবর্তিত রূপ।
এর মধ্যে আরামাইক ভাষা থেকে নাবাতি ভাষার লোকজন বর্ণমালা গ্রহণ করে, তারা আবার ব্যবসা করত আরবদের সাথে। এভাবে আরামাইক বর্ণমালাই নাবাতিদের সূত্র ধরে আরবি বর্ণমালায় রূপ পায়। কোনো কোনো লিপিবিজ্ঞানী বলেন, আরামাইক থেকে সিরিয়াক বর্ণমালা এসেছে, আর আরবরা সিরিয়ায় বাণিজ্য করতে গিয়ে সেই বর্ণমালা শিখে আসে। তবে দুই সূত্রই একটি পয়েন্টে একমত—আরবি বর্ণমালা এসেছে আরামাইক থেকে।
আরবি বর্ণমালার জন্মস্থান ধরা হয় ইরাকের কুফা নগরীতে, তাই প্রথমদিকের আরবি লিপিশৈলীকে ‘খত্তে কুফি’ বলা হয়। আল্লাহর রসুল (স)-এর চিঠিপত্রে যে আরবি পাওয়া যায়, তা এই খত্তে কুফিতে লেখা। বর্তমানে দৈনন্দিন কাজে ব্যবহৃত না হলেও ক্যালিগ্রাফিতে ব্যাপকভাবে এই লিপিশৈলীর ব্যবহার দেখা যায়।
Leave a Reply