Your cart is currently empty!
ক্যালিগ্রাফির শুরুর কথা
কমবেশি আমরা সবাই মা-বাবার মুখে এ কথা শুনেছি : হাতের লেখা সুন্দর কর, হাতের লেখা সুন্দর হলে পরীক্ষায় ভালো নাম্বার পাওয়া যায়। আমরা খাতায় হাত ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে লেখা সুন্দর করার প্র্যাকটিস করতাম। অনেক সময় কারও কাছ থেকে হাতের লেখা এনে তার লেখার উপর হাত ঘুরাতাম। যার হাতের লেখা একটু সুন্দর হতো, সবাই তার প্রশংসা করত। এ ছাড়াও বিভিন্ন উপলক্ষে লাল-নীল-হলুদ রঙের কাগজে মহামনীষীদের বাণী লিখতে তাকেই ডাকা হতো।
.
সুন্দর হাতের লেখার কদর সর্বকালেই ছিল। মানুষ যখন লিখনরীতি আবিষ্কার করেছে, তখন থেকেই কীভাবে আরও সুন্দর করে লেখা যায় তার চেষ্টা করেছে। এই চেষ্টার ফসল হিসেবেই জন্ম নেয় ‘ক্যালিগ্রাফি’ আঁকার ধারা।
.
ক্যালিগ্রাফি শব্দটি এসেছে প্রাচীন গ্রিক কালিগ্রাফিয়া শব্দ থেকে। কালোস (kallos) অর্থ সুন্দর, আর গ্রাফেইন (graphein) অর্থ লেখা। তখন ক্যালিগ্রাফি বলতে কেবল সুন্দর লেখা বোঝালেও এখন তার অর্থ আলাদা। ক্যালিগ্রাফিকে বর্তমানে স্বতন্ত্র শিল্পের মর্যাদা দেওয়া হয়, অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধুমাত্র ক্যালিগ্রাফির উপর আলাদা ডিপার্টমেন্ট আছে।
.
ঠিক কবে থেকে শিল্প হিসেবে ক্যালিগ্রাফির যাত্রা, ইতিহাসবিদগণ তার সময়কাল নির্ণয় করতে পারেননি। চীনে খ্রিষ্টপূর্ব ২০০ সনে ষাঁড়ের হাড়ের উপর আঁকা ক্যালিগ্রাফি পাওয়া গেছে। এই সূত্র ধরে অনেকেই বলেন ক্যালিগ্রাফির শুরু চীন থেকে। কিন্তু শিল্পবোধ যেহেতু মানুষের সত্তাগত বৈশিষ্ট্য, এমন না যে কেবল নির্দিষ্ট এক জাতিই শিল্প বোঝে আর অন্যেরা বোঝে না, তাই চীনাদের আমি ক্যালিগ্রাফির স্রষ্টা বলতে রাজি নই। সে যা-ই হোক, ক্যালিগ্রাফির শুরু যেখানেই হোক না কেন, বিশ্বের দরবারে তাকে উপস্থাপন করে আরবরা।
.
প্রথমদিকে আরবি হরফ লেখা হতো কৌণিকভাবে। যেহেতু তখনও কাগজের ব্যবহার শুরু হয়নি, তাই লিখতে হতো পাথরে বা প্রাণীর হাড়ে। সেখানে স্মুথলি লেখা সম্ভব হতো না, প্রতিটা হরফকেই কোনাকুনি করে লেখা হতো। এই ধরনের লেখাকে বলা হয় ‘কুফি’। এর পরে যখন কাগজের ব্যবহার শুরু হয়, তখন হরফগুলোকে গোলগাল করে লেখা হতে শুরু করে। নতুন এই লিপিশৈলীর নাম দেওয়া হয় ‘নসখ’।
.
ইরান যখন মুসলমানদের অধীনে আসে, পারসিকরা দলে দলে ইসলাম গ্রহণ করতে থাকে। তাদের মনমানসিকতা ছিল শৈল্পিক, তারা সৌন্দর্য বুঝত। তারা আরবি হরফকে নিজেদের হরফ হিসেবে গ্রহণ করে নেয়, এরপর তাতে প্রয়োগ করে শৈল্পিকতার ছোঁয়া। আর এভাবেই জন্ম নেয় শত শত লিপিশৈলী, নতুন উদ্যমে চর্চিত হতে থাকে ক্যালিগ্রাফি।
.
মুসলিমদের মধ্যস্থতায় ইউরোপেও ক্যালিগ্রাফি চর্চা শুরু হয়। মধ্যযুগ ও রনেসাঁস যুগের অনেক শিল্পকর্মে মুসলিমরীতির ক্যালিগ্রাফি দেখা যায়। বর্তমানে পৃথিবীর সবদেশেই ক্যালিগ্রাফি চর্চা হয়। ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য ধনী-গরিব সব শ্রেণির মানুষই ক্যালিগ্রাফি রাখার চেষ্টা করেন।
Leave a Reply