Your cart is currently empty!
যেভাবে কোরআনে গোলাকৃতির ওয়াকফের ব্যবহার শুরু হয়
প্রাক-ইসলামি যুগে আরবি ভাষায় কোনো যতিচিহ্ন ছিল না। কোথায় থামতে হবে তা আরবরা নিজস্ব বুদ্ধিবলে বুঝে নিত। পবিত্র কোরআনেও কোনো যবর-যের, নুকতা ও ওয়াকফের চিহ্ন ছিল না। কিন্তু তিন মহাদেশজুড়ে ইসলাম ছড়িয়ে পর অনারবদের সুবিধার্থে যবর-যের ও নুকতা যোগ করা হয়। কোরআনের আয়াত স্পষ্টকরণে বিভিন্ন চিহ্নের ব্যবহার থাকলেও সুনির্ধারিত যতিচিহ্ন ছিল না। কয়েকশো বছর পর গিয়ে গোলাকৃতির ওয়াকফের ব্যবহার শুরু হয়। এর পেছনেও একটি ইতিহাস রয়েছে।
খ্রিষ্টীয় তৃতীয় শতকে পারস্যে মানি (২১৬-২৭৪ খ্রি.) নামক একজন মিথ্যা নবী ছিলেন, যিনি পারস্যে প্রচলিত জরথুস্ত্রধর্ম, খ্রিষ্টধর্ম ও বৌদ্ধধর্ম থেকে উন্নততর নতুন এক ধর্ম তৈরির চেষ্টা করেছিলেন—যাকে Manichaeism বা মানিধর্ম বলা হয়।
মানি ছিলেন শিল্পকর্মে ওস্তাদ। তিনি যে সিরীয় ভাষায় যে বইগুলো লিখে গেছিলেন, তা ছিল অলংকরণে পূর্ণ। এমনকি তিনি সিরীয় বর্ণমালার নতুন লিপিশৈলী আবিষ্কার করেছিলেন। পরবর্তীতে মানিধর্মের অনুসারীরাও একই নীতি অনুকরণ করে, পৃষ্ঠার চারপাশে ফুল-পাখি-লতাপাতা ও স্বর্ণ-রুপার কালির ব্যবহার শুরু করে। এই কাজের জন্য তারা প্রচুর অর্থ ব্যয় করত।
মুসলিম ইতিহাসবিদ ইবরাহিম সিন্ধি বলেন, ‘জিন্দিকগণ (মানিধর্মের অনুসারী) যদি তাদের শুভ্র এবং মসৃন উত্তম কাগজ, চমৎকার কালো কালি এবং লিপিকারদের প্রশিক্ষণের জন্য আপেক্ষাকৃত কম ব্যয় করে তা হলে আমি খুব খুশি হবো; অবশ্য তাদের গ্রন্থে ব্যবহৃত কাগজ অপেক্ষা সুন্দর কাগজ অথবা তাদের লিপির মত সুন্দর হরফমালার মতো অধিকতর সুন্দর লিপির কথা আমার জানা নেই।’ তার এ বক্তব্যের সূত্র ধরে আরেকজন ইতিহাসবিদ বলেন, ‘মানিধর্মের অনুসারীরা তাদের পাণ্ডুলিপির রচনায় যে অর্থ ব্যয় করে, তা দিয়ে খ্রিষ্টানদের গির্জা নির্মাণ সম্ভব!’
এই মানিধর্মের অনুসারীরা তাদের লেখায় যতিচিহ্নের ব্যবহার শুরু করে, এবং বাক্যের শেষ বোঝাতে লাল রঙে গোলাকৃতির চিহ্ন দিত। মুসলমানদের মনে হলো কোরআনে ওয়াকফ বোঝাতে এরকম গোল চিহ্ন ব্যবহার করা যায়। এভাবেই কোরআনে গোলাকৃতির ওয়াকফের ব্যবহার শুরু হয়, আজও প্রায় সব ধরনের কোরআনে গোল ওয়াকফ দেখা যায়। অবশ্য আরবি ভাষায় বাক্যের শেষ বোঝাতে এই ধরনের গোল চিহ্ন দেওয়া হয় না, বরং একটি ডট (.) ব্যবহার করা হয়।
Leave a Reply